সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সারা দেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ, উচ্ছেদ, ধ্বংস ও জরিমানা করার পরেও চলছে এসব অবৈধ ইটভাটাগুলো। অবৈধ ইটভাটাগুলো অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না মালিক পক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আবারও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১৩২টি ইটভাটার মধ্যে ১১৪টি ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করে। এসব ভাটার মধ্যে প্রায় ৫২টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আছে এবং বাকি ৮০টিরই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে এসব অবৈধ ইটভাটায় সঠিকভাবে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা যায়।
পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারিতে দিনব্যাপী অভিযানে ৯টি অবৈধ ইটভাটায় ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এবং রায়গঞ্জের মোড়দিয়া মেসার্স আলফা ব্রিকস বন্ধ ঘোষণা, নারায়নশালুয়া মেসার্স জেনিন ব্রিকসের কিলন ও চিমনি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেয়া এবং সদরের বহুতীর মেসার্স রাইন ব্রিকসের চিমনি ও কিলন আংশিক ভেঙে দেয়া হয়।
বিভিন্ন সময় অবৈধ ইটভাটায় প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করা, গুঁড়িয়ে দেয়া ও জরিমানা করা ইটভাটাগুলোতে গত কয়েকদিন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
অভিযানে বন্ধ করার কয়েকদিন পর থেকেই মেসার্স আলফা ব্রিকস পুরোদমে চালু পাওয়া যায়। আলফা ব্রিকসের ম্যানেজার আব্দুল আলিম বলেন, প্রথমে বন্ধ ঘোষণা করে, পরে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করলে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মাফ চাওয়া হয়। ভাটার মালিক শাহিন মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্যারেরা ক্ষমা করে দেন। এবং এক মাস পরে ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য সমিতির লোকজনকে ভাটাপ্রতি এক থেকে দুই লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে।
পাশেই পুরোদমে চলছে দেশ ব্রিকস। কথা হয় ম্যানেজার আব্দুল জব্বারের সাথে। তিনি বলেন, ৪ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছি। সমিতির মাধ্যমে কথা বলেই পুনরায় চালু করা হয়েছে।
রায়গঞ্জের নারায়ন শালুয়ায় অবৈধ ইটভাটা মেসার্স জেনিন ব্রিকসের চিমনি ও কিলন সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে উচ্ছেদ ও সদরের বহুতীর মেসার্স রাইন ব্রিকসের চিমনি ও কিলন আংশিক ভেঙে দিলেও মালিক পক্ষ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের আদেশ অমান্য করে পুনরায় ভাটা পুরোদমে চালু করেছে। জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ভাটার কিলনের ভিতর ইট, মাঠে ইট। এ অবস্থায় ভাটা বন্ধ করলে মালিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। মানবিক কারণে এসব ভাটা অভিযানের কয়েকদিন পরেই চালু করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে ঘুষ না দিলে নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেন এ নেতা। এমন অভিযোগ জেলা প্রশাসনের এক সভায়ও বলা হয়েছে। ফলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামীতে যেন সহজেই এ ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এবং শতভাগ জিগজ্যাগ বৈধ ইটভাটা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ভাটা প্রতি টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা অপপ্রচার মাত্র। আমরা সমিতির ফান্ডের বিভিন্ন খরচ হিসেবে ভাটা প্রতি চাঁদা তুলে থাকি।
পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার পর আবারও চালু করেছে এ বিষয়টিও আমরা অবগত হয়েছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। সেই সাথে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো, নজরুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরে আবারও সেগুলো চালু করে থাকলে সেটা আমাদের জানার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসন এককভাবে সব করতে পারে না। স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলব ফের অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ অবৈধ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
